আয়শার জীবনের গল্প

প্রথম প্রকাশঃ মে ১, ২০১৬ সময়ঃ ৪:২৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৩১ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার

10373488_920023391360646_7507275147529208851_nআমি আয়শা। আমার আব্বা-আম্মার একমাত্র মেয়ে। আব্বা ঘরে আসলেই,  ‘আশা আশা, আমার আম্মা কই’ এরকম করে ডাকে। আব্বা আমাকে অনেক ভালবাসে, আম্মাও।  সেদিন রুনিদের বাড়িতে অনেকগুলা পুতুল দেখছি। আব্বারে বললাম, ‘আব্বা, তুমি আমারে পুতুল কিনা দিবা?’ আব্বা বলে, ‘আমার আম্মার জন্য কয়টা পুতুল আনবো, বল’।

পরেরদিন রুনিদের ঘর থেইকা আইসা দেখি, ওমা এত্তগুলা পুতুল! আব্বা আমারে অনেক ভালবাসে। আব্বা বলছে, আরেকটু বড় হইলে আমাকে ইসকুলে দিবে। আমি সালমা আপার মতো টিচার হবো। সবাই আমার কথা শুনবে। আমি বলি নাই তো, আব্বা বলছে। আমার বাপ আমাকে বেশি ভালবাসে। কত্ত আদর করে, পুতুল দেয়, ইসকুলেও নেবে বলছে। আমারে সালমা আপার মতো সুন্দর সুন্দর কথা শিখায়। দেখেন না আমার কথাগুলা কেমন কেমন। আম্মা পারে না, আমি পারি। আম্মা হাসে আর কই, “আমার ময়না পাখি কই? কুটুর কুটুর শিম বিচির মতোন কী সুন্দর কথা কইতে শিখছে”। আম্মা আমারে খুব ভালবাসে।

কয়েকদিন ধরে আম্মা খাইতে পারে না, রাঁনতে পারে না, খালি খুকখুক করে কাশে আর কাঁন্দে। আমারে কাছে আসতে দেয় না। আব্বা খালি মেজাজ দেখায়, আম্মার লগে; আমার লগেও। আম্মা আমারে এখন আর আদর করে ময়না ডাকে না। আব্বাও আদর করে না। “আমার আম্মা কই” – বলে ডাকেও না।

আম্মা আমাকে অনেক ভালবাসতো; আর আব্বা কিছুদিন ধরে একটু একটু; আর এখন একটুও না। সারাদিন বকা দেয়, আবার মারেও। আম্মার কী হইছে জানি না। আমি ঘুম ছিলাম। তারপর আর কথা বলেনি। বাড়ির পেছনে যে খালটা আছে; তার পাশে আম্মারে মাটির নিচে বিছানা কইরা দিসে।   এখন ঐখানেই থাকে।   দিনে যাইতে পারি না, আব্বা বকা দেয়। রাইতে চুরি করে চলে যাই, কেউ না জানে মতো। কাঁদি, কথা কই। আম্মারে জিজ্ঞাস করলাম, আমি আর সুন্দর সুন্দর কথা শিখবো না? তুমি রাঁনবা না? আমারে আদর করবা না? কিছুই  বলে না। খালি চুপ করে থাকে।

কয়েকদিন ধরে আব্বা ঠিক মতো বাড়িতে আসে না। ঘরে একটু খাবার নাই। রুনির মা খাইতে ডাকে, আব্বা তাও খায়তে দেয় না,  বেহুদা মারে; খাইতে দে না। তাইলে আমি কী খাবো? আম্মারে বললাম আমার ক্ষিধা লাগছে, তাও শুনে না।

তসলিমার আম্মা বলছে, ওদের ক্ষেতে ধান লাগাইলে খাইতে দিব। কী মজা কী মজা। ধান লাগাইতে আমার অনেক ভালো লাগে। আইকা যখন ধান লাগানো শেষ হইছে, তসলিমার আম্মা আদর কইরা ভাত খাওয়াইছে। আলু ভত্তা, ডাইল আর পিয়াজ দিয়া। কী মজা !

একটু বেশি গরম লাগতেছিল, মাথাটা কী গরম হইছে। তসলিমার আম্মা বলছে, ‘ গোসল করলে ঠিক হইয়া যাইবো’। অহন আর ইসকুলও নাই, সুন্দর সুন্দর কথা শিখানেরও কেউ নাই। তসলিমার মা বলছে, ধান লাগাইলে খাইতে দিব। কথা শিখনের দরকার কী।

=========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G